আরো একটি স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হতে চলেছে সারা দেশ জুড়ে। দেশাত্মবোধক কবিতা, গান, নাটক ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্মরণ করবো। একটু নস্টালজিক হয়ে পড়বো। ছুটির দিনে একটু ভালোমন্দ খাওয়াদাওয়া করবো। পরদিন থেকে আাবার সব আগের মতোই চলতে থাকবে। স্বাধীনতা দিবস আসে যায়, তবে আমরা ঠিক আগের মতোই চলতে থাকি আর মাঝে মাঝে হতাশ হয়ে পড়ি এই ভেবে যে দেশটা দুর্নীতিতে ছেয়ে গেল, সব কেমন যেন খারাপের পথে ধাবিত হচ্ছে, ভালোর দিন আর নেই !
আমাদের অগ্রগতি এবং ভালোর পথে বাধা আমরা নিজেরাই – দেশের সাধারণ মানুষ। হ্যাঁ, আমি, আপনি, আমরা সকলেই দায়ী। আমরা মনে করি দেশের বড় বড় ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, রাজনীতির উপরমহলের লোকজন, সরকারি আধিকারিক – এরাই দেশটাকে উচ্ছন্নে নিয়ে যাচ্ছে। আর আমরা ধোয়া তুলসীপাতা। আসলে আমরা অপরের দোষ দেখতে পছন্দ করি। নিজেদের ওই সামান্য অপরাধ তো রাঘব বোয়ালদের অপরাধের কাছে কিছুই নয়। অতএব রাস্তায় নোংরা ফেলা, সিগন্যাল না মেনে গাড়ি চালানো, দোকানে ওজনে জিনিস কম দেওয়া, নকল জিনিসকে আসল বলে বিক্রি করা, চাকরির জন্য ঘুষ দেওয়া ও নেওয়া, স্কুলে ঠিকভাবে না পড়িয়ে টিউশন পড়ানো, অফিসের নির্ধারিত কাজে ফাঁকি দেওয়া, প্রশাসনে থেকে অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়ে ঘুষ দাবি করা, রাজনীতিবিদ-দের উস্কানিতে নিজেদের লোকেদের সাথে দাঙ্গা করা ইত্যাদি এগুলো তো অপরাধের মধ্যেই পড়ে না !
আমরা ভূলে যাই যে বিন্দুতেই সিন্ধু হয়। আমরা সকলে মিলেই দেশ। দেশের আলাদা করে কোন অস্তিত্ব নেই। সবাই যদি প্রতিনিয়ত অন্যায়গুলি করে চলি হোক না সে যতই ছোট, তাহলে দেশটা ভালো হবে কি করে? যতই আমরা রাজনীতিবিদ-দের বা সরকারের নীতির দোষ দিই না কেন ভূত সরষের মধ্যেই রয়েছে। আমরা সকলেই প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছি সবার থেকে ওপরে ওঠার জন্য, যেন-তেন-প্রকারেণ আরো বেশী অর্থ উপার্জন করার জন্য, হোক না সে নিজের দেশের ভাইবোনদের ঠকিয়ে বা মেরে। আমরা যদি অন্যায় কাজগুলো না করি এবং আমাদের ক্ষুদ্র স্বার্থ পরিত্যাগ করে অন্যায় কাজে কোনরকম সহযোগিতা না করি তাহলে অপরাধ, দু্র্নীতি হবে কি করে? আমরা সাধারণ মানুষরা যে দেশের স্বপ্ন দেখি, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামী পূ্র্বপুরুষরা যে দেশের স্বপ্নে আত্মত্যাগ করেছে, জীবন উৎসর্গ করেছে, সেই দেশ আমরা ঠিক পাবো। দেশের অধিকাংশ জনগণ যদি সচেতন হয়, সততা অবলম্বন করে চলে, দু্র্নীতির সাথ না দেয়, প্রকৃতি, দেশের এবং দশের কথা মাথায় রেখে সমস্ত কাজকর্ম করে তাহলে দেশের মঙ্গল হবেই।
শুধুমাত্র শুভ স্বাধীনতা দিবস বা ভারত মাতা কি জয় বা জয় শ্রীরাম বললেই সব ঠিক হয়ে যায় না। আসুন আমরা আমাদের খারাপ ও অন্যায় কাজগুলো পরিত্যাগ করে, সৎ ভাবে সবাইকে সাথে নিয়ে সকলকে ভালোবেসে আলোর পথে এগিয়ে চলি ।
স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আত্মত্যাগের কথা ও দেশাত্মবোধক কিছু গান নিয়ে এই অ্যালবামটি আশা করি ভালো লাগবে।